![]() |
পোডিয়াম। উপরের ডোমে কালো সিলিংয়ে সাদা বিন্দুগুলি কালো রাতের আকাশে তারার প্রতীক। |
রোজ সকালে চাট্টি নাকে মুখে গুঁজে হাওড়া থেকে যারা বাসে চেপে ব্রেবোর্ন রোড দিয়ে যাই, অনেকেই হয়তো ক্যানিং স্ট্রিট এর ঠিক আগেই ডানদিকে একটা লাল-হলুদ বাড়ি দেখেছি। নাম লেখা থাকে NEVEH SHALOME SYNAGOGUE। আমি অনেকদিন অবধি মাথামুন্ডু বুঝিওনি। খুঁজিওনি। খানিকটা কৌতূহলবশেই ঢুঁ মেরেছিলাম সিনাগগের অন্দরে। ব্রেবোর্ন রোড, এজরা স্ট্রিট, পোলক স্ট্রিটের মতো জনবহুল কোলাহলপূর্ণ জায়গায় যে কি নিঝুম শান্তি বিরাজ করতে পারে, সেটা এখানে না এলে বোঝা যাবেনা।
চট করে পিছিয়ে যাই দুশো বছরেরও আগে। শ্যালম আরন কোহেন- প্রথম ইহুদী ব্যবসায়ী, যিনি সুদূর সিরিয়া থেকে বোম্বে, সুরাত হয়ে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়েন। জুয়েলারী ব্যবসা শুরু করে ধীরে ধীরে বস্ত্র, রেশম আরো নানাদিকে ছড়িয়ে দেন ব্যবসা। মূলতঃ ইরাক থেকে আগত ইহুদীরাই কলকাতায় এসে ব্যবসা ও বসবাস শুরু করেন। একটা সময় কলকাতায় ইহুদীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০০। ১৯৪৮ এ ইস্রায়েলের পুনরুত্থানের পর এখানকার ইহুদীরা নিজেদের দেশে ফিরতে শুরু করেন। উইকিপিডিয়ার মতে, বর্তমানে কলকাতায় ইহুদীর সংখ্যা ৩০।
কলকাতার বুকে পাঁচটি সিনাগগ ছিল একসময়, এখন তার মধ্যে তিনটি দেখা যায়।
নেভে শ্যালোম সিনাগগ, মাগেন ডেভিড সিনাগগ, বেথ এল সিনাগগ, মাগেন এবথ এন্ড ইসিবিথ জেকব বেঞ্জামিন ইলিয়াস প্রেয়ার হল, এবং শ্যারে রেশন প্রেয়ার হল।
শেষ দুটির অস্তিত্ব এখন আর নেই।
হাওড়ার দিক থেকে এলে, ব্রেবোর্ন রোডের ওপর ক্যানিং স্ট্রিট ক্রসিং এ নেমে পড়ুন। দুদিকে গুচ্ছের দোকান। ডানদিকের রাস্তাটায় ঢুকলেই মাগেন দাভিদ সিনাগগের গেট। ১৮৮৪ তে ইলিয়াস এজরা তাঁর বাবা দাভিদ জোসেফ এজরার স্মৃতিতে এটি নির্মাণ করান।
![]() |
মাগেন দাভিদ সিনাগগ। চূড়ান্ত রাজকীয়। |
![]() |
ওপরে মহিলা গ্যালারি। রঙিন কাঁচের জানালা। মাগেন দাভিদ সিনাগগ। |
এর ঠিক পাশেই ব্রেবোর্ন রোডের ওপরেই নেভে শ্যালম সিনাগগ। কলকাতায় সবচেয়ে পুরানো সিনাগগ। ১৮২৫ এ নির্মিত এই সিনাগগটি ১৮৮৮ তে পুনর্নির্মিত হয়।
দু' পা হেঁটে চলে আসা যাক টি বোর্ডের থেকে বাঁদিকের রাস্তায়। একটুখানি গিয়ে পোলক স্ট্রিটে ঢুকে পাওয়া যাবে তৃতীয় সিনাগগটি, যার নাম বেথ এল সিনাগগ। ১৮৫৬ এ দাভিদ জোসেফ এজরা এবং এজেকিয়েল জুডা এর নির্মাণ করান। পরে আবার ইলিয়াস শ্যালোম গাবে এর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করেন।
![]() |
বেথ এল সিনাগগ, পোলক স্ট্রিট, কলকাতা। |
![]() |
ডোমের সিলিংয়ে নীল রঙের মাঝে সাদা বিন্দুগুলি নীল আকাশ ও জ্যোতিষ্কদের প্রতীক। বেথ এল সিনাগগ। |
![]() |
বেথ এল সিনাগগের অন্দরমহল। |
![]() |
দোতলার মহিলা গ্যালারি। বেথ এল সিনাগগ। |
রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪.৩০ পর্যন্ত সিনাগগের ভিতরে যাওয়া যায়। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। ওখানে মাথায় দেবার টুপি রাখা আছে, টুপি পরে ভিতরে যাবার নিয়ম।
ছবি তুলতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য সিনাগগগুলির ভিতরের দৃশ্য সম্পদ হতে পারে। রঙ্গিন কাঁচের মধ্যে দিয়ে আলোর খেলা, উপর থেকে ঝোলা ঝাড়বাতি, অসীম নৈঃশব্দ্য- অন্তত একবার যেতেই হবে চিরচেনা এই জায়গায়।
![]() |
রঙিন কাঁচের মধ্যে দিয়ে আলোর মায়ার খেলা। মাগেন দাভিদ সিনাগগের দৃশ্য। |
চারজন বা তার বেশিজন একসাথে যেতে গেলে অনুমতি লাগে। সেই ইমেইল আইডি নীচের ছবিতে দেওয়া আছে। নিয়মাবলী:
খুব কম লোক যান বলে অনেকসময় রক্ষী সামনাসামনি থাকেননা। আমি যেমন নেভে শ্যালোম দেখতে পাইনি। এই একটাই অসুবিধা। বাকিটা শুধু অন্য একটুকরো কলকাতার নীরব ছবি।
কমেন্টে আপনার মতামত জানান।
আরো বিশদ তথ্যের জন্য রইল উইকিপিডিয়ার লিংক
No comments:
Post a Comment
Write your comment here