Valley of Flowers and Hemkund Sahib Itinerary

ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স এবং হেমকুন্ড সাহিব, জুলাই ২০১৯।।জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর– বেশিরভাগ মানুষের ভ্রমণ ক্যালেন্ডারে মল মাস। কারণ একটাই, বৃষ্টি। যাঁরা পাহাড় ভালোবাসেন, রাস্তা বন্ধ বা ধসের ভয় থাকায় ভারতের প্রায় সব পাহাড়ই এইসময় তাঁদের জন্য বিপজ্জনক। জঙ্গলে প্রজনন ঋতু, তাই সাফারি বন্ধ। তার মধ্যেও বর্ষার ভ্রমণ হিসাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল লাদাখ(কাশ্মীর) আর স্পিতি ভ্যালি(হিমাচল)। কিন্তু এই দুটিই বেশ ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।

আরো একটা জায়গা অবশ্য আছে, তাতে খরচাপাতি বেশ কম, সেটা নিয়েই আপাতত আলোচনা করব, জায়গাটার নাম ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স।














   





































উত্তরাখণ্ডের নন্দাদেবী ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্গত ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স বা নন্দনকানন বা ফুলোঁ কি ঘাঁটি হলো প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি, যেখানে সুবিশাল প্রান্তর জুড়ে পুরো বর্ষাকাল ধরে ফুটতে থাকে পাঁচ'শোরও বেশি ফুল। সব ফুল একসঙ্গে ফোটেনা, কিন্তু এই উপত্যকায় পৌঁছানোর পুরো পথ জুড়ে এবং উপত্যকার ভিতরে ঘন সবুজ প্রকৃতির কোলে নানা রঙের এবং নানা প্রজাতির ফুল দেখতে পাওয়া যায়, যার বেশিরভাগই ওষধি। কথিত আছে, রামায়ণে লক্ষ্মণ মেঘনাদের তীরে মুর্ছিত হয়ে পড়লে হনুমান যে গন্ধমাদন পর্বত তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা এই জায়গাই। গাড়োয়াল হিমালয়ের এই অংশটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মোটামুটি 3300–3600 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। জাস্কার এবং গ্রেট হিমালয়ের মধ্যে এই ফুলের উপত্যকাটি হলো একটি বাফার বিশেষ। ১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পাওয়া ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স বর্তমানে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত বায়োসফিয়ার রিজার্ভ। বহু এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির সঙ্গে বহু বন্যপ্রাণীরও বাসস্থান এই অঞ্চল। বসবাস বা রাত্রিবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

ভ্রমণসূচী :–
১ম দিন– হাওড়া থেকে হরিদ্বারগামী ট্রেন।

২য় দিন– হরিদ্বার পৌঁছে আরতি দেখা। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া দরকার কারণ পরদিন ভোরে উঠতে হবে।


৩য় দিন– ভোর পাঁচটার মধ্যে JMOU বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যোশীমঠ এর বাস ধরতে হবে। প্রায় ১২ ঘন্টা লাগে যোশীমঠ যেতে। যোশীমঠে রাত্রিবাস। গোবিন্দঘাটের বাস পেলে সরাসরি গোবিন্দ্ঘাটও চলে আসা যায়।

৪র্থ দিন– যত সকালে সম্ভব, ৮টার মধ্যে বেরিয়ে যোশীমঠ থেকে শেয়ার গাড়িতে গোবিন্দ্ঘাট, আবার সেখান থেকে আরেকটি শেয়ার গাড়িতে পুলনা পৌঁছান। এখান থেকেই আসল ভ্রমণ শুরু হচ্ছে।
        পুলনা থেকে ঘাঙ্ঘারিয়া ১১ কিমি পথ। হেঁটে বা খচ্চরের পিঠে চেপে যাওয়া যায়। হেঁটে গেলে দু'পাশের সুন্দর দৃশ্য, লক্ষ্মণগঙ্গা নদী দারুণ উপভোগ্য। সন্ধের মধ্যে ঘাঙ্ঘারিয়া পৌঁছাতে হবে, কারণ পাহাড়ে সন্ধে নামলে এতটুকু আলোর ব্যবস্থা নেই। বন্য জন্তুও সামনে চলে আসতে পারে। রাত্রিবাস ঘাঙ্ঘারিয়াতে। আপাতত তিনরাত্রি এখানেই থাকা।




৫ম দিন– সকাল ৬টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স দেখতে বেরোনো। কাউন্টার থেকে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে স্লিপ নিতে হবে। তিনদিনের জন্য স্লিপ ইস্যু হয়। এখানে একদিন ধরেই প্ল্যান করে দেওয়া হল।তারপর ফুলের বনের মধ্যে দিয়ে পথ চলা। পুষ্পাবতী নদী পেরিয়ে ক্রমাগত চড়াই অতিক্রম। গ্লেসিয়ার পার হয়ে ভ্যালিতে প্রবেশ। এরপর সময় ও শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী যতটা খুশি এগিয়ে চলা, মখমলের মতো সবুজের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে ফুলের সঙ্গে আলাপ।














বিকাল ৫টার মধ্যে চেকপোস্টে ফিরে এসে উপস্থিতি জানাতে হবে, নইলে কর্মীরা খুঁজতে বেরোবেন।

৬ষ্ঠ দিন– আগেরদিনের মতোই সকালে বেরিয়ে পড়ে আজকের গন্তব্য হেমকুন্ড সাহিব। শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহের তপস্যাস্থল এই গুরুদ্বারটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ গুরুদ্বার। প্রায় ১৪০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হেমকুন্ড সাহিবের পাশেই রয়েছে লোকপাল হ্রদ। অসম্ভব সুন্দর এই হ্রদের শোভা। অসংখ্য শিখ নারী ও পুরুষ এই তীর্থে আসেন বছরের এই সময়ে। পথ চওড়া হলেও চড়াই খুব। তাই ক্লান্তি এবং দমে ঘাটতি হবেই এই রাস্তায়। হাঁটতে অসুবিধা হলে ঘোড়া পাওয়া যায়। কপালে থাকলে ব্রহ্মকমল দেখতে পাওয়া যাবে। হেমকুণ্ডের দরবার দুপুর একটায় বন্ধ হয়। তাই ভোরবেলা বেরোলে তবেই ঠিকমতো দরবারে পৌঁছে প্রসাদ পাবেন। ভারতের একমাত্র লক্ষ্মণ মন্দির এখানেই। লঙ্গরে গরম খিচুড়ি আর চা মিলবে, বিনামূল্যে। দুপুরে আবহাওয়ার অবনতি এখানকার নিত্যদিনের বিষয়। তাই মেঘ আর বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই নেমে আসতে হবে ঘাঙ্ঘারিয়াতে।










৭ম দিন– হেঁটে ফেরা ঘাঙ্ঘারিয়া থেকে পুলনা। তারপর যোশীমঠ ফিরে রাত্রিবাস।
৮ম দিন– সকাল ৭টার মধ্যে বাস ধরে অথবা যোশীমঠ থেকে চামলি এবং চামলি থেকে ঋষিকেশ – এইভাবে শেয়ার গাড়িতে ঋষিকেশ ফেরা।

এরপর ট্রেনের টিকিট অনুযায়ী ঋষিকেশ, হরিদ্বার বা আরো একটু ঘুরে ফিরে আসা। মোটামুটি দশ দিন হলে পুরো ট্যুরটি ভালোভাবে হয়ে যায়।

থাকা- খাওয়া :– হরিদ্বারে চটিওয়ালা বা প্রকাশলোকে লস্যি, ছাস,পরোটা ইত্যাদি  এবং দাদা বৌদি বা মাসির হোটেলে নিরামিষ বাঙালি খাবার স্বচ্ছন্দে খাওয়া যাবে।
হরিদ্বারে হর কি পৌরী ঘাটের কাছে প্রচুর আশ্রম ও হোটেল রয়েছে। ৭০০– ১৫০০ বাজেটে নানারকম ঘর, এসে বুক করলেই চলবে।



ঋষিকেশ থেকে রামঝুলা এসে চটিওয়ালা রেস্টুরেন্টটি বেশ ভাল। ঋষিকেশে ত্রিবেণী ঘাটের কাছে আশ্রম, বসেরা দ্য হোটেল, এবং আরো অনেক হোটেলে ১০০০ টাকায় ঘর পেয়ে যাবেন।
মুনি কি রেতির কাছে ডিভাইন সোসাইটির আশ্রম আগে থেকে বুক করলে পেয়ে যাবেন।

যোশীমঠে হোটেল মাউন্ট ভিউ আনেক্স ১১০০ টাকা, আউলি ডি, GMVN সহ অনেক হোটেল পাবেন। আউলি ডি ফুডপ্লাজায় আমিষ খাবার পাবেন। স্ট্রিট ফুডও পাওয়া যায় নানারকম।

ঘাঙ্ঘারিয়াতে হোটেল নন্দা-পার্বতী ৪৫০ টাকায় সাধারণ মানের ঘর। এছাড়া  বাজেট হোটেল কুবের, প্রিয়া, প্রীতম, ইত্যাদি। দেবলোক আর কুবের আনেক্স (৩০০০টাকা) একটু বেশি দামী। দেবলোক আর প্রীতমের রেস্টুরেন্টে সবরকম খাবার পাওয়া যায়। চাইলে টেন্ট বুক করেও থাকা যায়। খরচ বেশি।

যাতায়াত :– হরিদ্বার থেকে যোশীমঠ বাসে ৪০০/- টাকা করে। যোশীমঠ–গোবিন্দ্ঘাট ৫০/-, গোবিন্দ্ঘাট-পুলনা ৪০/-।
পুলনা থেকে ঘাঙ্ঘারিয়া যেতেখচ্চরের ভাড়া ৬০০–৮০০/-,দরদাম করে নেবেন।
ফেরা একইভাবে।
পুলনার পর থেকে সব খাবার জিনিসের দাম এমনি দামের দ্বিগুণ। সেই বুঝে যেগুলো সম্ভব আগে থেকেই কাছে মজুত রাখুন।

পাহাড়ি পথে চলার সময় জল, বর্ষাতি, চকোলেট, ড্রাই ফ্রুটস সঙ্গে রাখুন। ট্রেকিং শু ভালো পরাই ঠিক হবে। হাতের লাঠি এবং পঞ্চ রেইনকোট গোবিন্দ্ঘাট এ এসেও কিনে নিতে পারেন।

ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স এবং হেমকুণ্ডের কোন গাছ বা ফুলে হাত দেওয়া বা ছেঁড়া নিষেধ। খাবারের উচ্ছিষ্ট ও প্লাস্টিক ফেলে আসা গর্হিত অপরাধ।

উত্তরাখণ্ডের এই উচ্চ উচ্চতাযুক্ত ট্রেকটি ভালো লাগলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান। প্রকৃতিকে উপভোগ করুন।

বিশদ তথ্যের জন্য দেখতে পারেন–

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Valley_of_Flowers_National_Park

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Gurudwara_Shri_Hemkund_Sahib


–ঋত্বিক।

No comments:

Post a Comment

Write your comment here

Kinnaur Calls... A Trip to Kinnaur

       A trip to Kinnaur, Himachal Pradesh, India Kinnaur at its best...View at Sangla                   A click on this video ...

Popular posts