কলকাতার সিনাগগ

পোডিয়াম। উপরের ডোমে কালো সিলিংয়ে সাদা বিন্দুগুলি কালো রাতের আকাশে তারার প্রতীক।
কলকাতার সিনাগগ (ইহুদী উপাসনাস্থল)

      রোজ সকালে চাট্টি নাকে মুখে গুঁজে হাওড়া থেকে যারা বাসে চেপে ব্রেবোর্ন রোড দিয়ে যাই, অনেকেই হয়তো ক্যানিং স্ট্রিট এর ঠিক আগেই ডানদিকে একটা লাল-হলুদ বাড়ি দেখেছি। নাম লেখা থাকে NEVEH SHALOME SYNAGOGUE। আমি অনেকদিন অবধি মাথামুন্ডু বুঝিওনি। খুঁজিওনি। খানিকটা কৌতূহলবশেই ঢুঁ মেরেছিলাম সিনাগগের অন্দরে। ব্রেবোর্ন রোড, এজরা স্ট্রিট, পোলক স্ট্রিটের মতো জনবহুল কোলাহলপূর্ণ জায়গায় যে কি নিঝুম শান্তি বিরাজ করতে পারে, সেটা এখানে না এলে বোঝা যাবেনা।
         চট করে পিছিয়ে যাই দুশো বছরেরও আগে। শ্যালম আরন কোহেন- প্রথম ইহুদী ব্যবসায়ী, যিনি সুদূর সিরিয়া থেকে বোম্বে, সুরাত হয়ে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়েন। জুয়েলারী ব্যবসা শুরু করে ধীরে ধীরে বস্ত্র, রেশম আরো নানাদিকে ছড়িয়ে দেন ব্যবসা। মূলতঃ ইরাক থেকে আগত ইহুদীরাই কলকাতায় এসে ব্যবসা ও বসবাস শুরু করেন। একটা সময় কলকাতায় ইহুদীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০০। ১৯৪৮ এ ইস্রায়েলের পুনরুত্থানের পর এখানকার ইহুদীরা নিজেদের দেশে ফিরতে শুরু করেন। উইকিপিডিয়ার মতে, বর্তমানে কলকাতায় ইহুদীর সংখ্যা ৩০।
          কলকাতার বুকে পাঁচটি সিনাগগ ছিল একসময়, এখন তার মধ্যে তিনটি দেখা যায়।
নেভে শ্যালোম সিনাগগ, মাগেন ডেভিড সিনাগগ, বেথ এল সিনাগগ, মাগেন এবথ এন্ড ইসিবিথ জেকব বেঞ্জামিন ইলিয়াস প্রেয়ার হল, এবং শ্যারে রেশন প্রেয়ার হল।
শেষ দুটির অস্তিত্ব এখন আর নেই।
         হাওড়ার দিক থেকে এলে, ব্রেবোর্ন রোডের ওপর ক্যানিং স্ট্রিট ক্রসিং এ নেমে পড়ুন। দুদিকে গুচ্ছের দোকান। ডানদিকের রাস্তাটায় ঢুকলেই মাগেন দাভিদ সিনাগগের গেট। ১৮৮৪ তে ইলিয়াস এজরা তাঁর বাবা দাভিদ জোসেফ এজরার স্মৃতিতে এটি নির্মাণ করান।
মাগেন দাভিদ সিনাগগ। চূড়ান্ত রাজকীয়।

ওপরে মহিলা গ্যালারি। রঙিন কাঁচের জানালা। মাগেন দাভিদ সিনাগগ।

          এর ঠিক পাশেই ব্রেবোর্ন রোডের ওপরেই নেভে শ্যালম সিনাগগ। কলকাতায় সবচেয়ে পুরানো সিনাগগ। ১৮২৫ এ নির্মিত এই সিনাগগটি ১৮৮৮ তে পুনর্নির্মিত হয়।
          দু' পা হেঁটে চলে আসা যাক টি বোর্ডের থেকে বাঁদিকের রাস্তায়। একটুখানি গিয়ে পোলক স্ট্রিটে ঢুকে পাওয়া যাবে তৃতীয় সিনাগগটি, যার নাম বেথ এল সিনাগগ। ১৮৫৬ এ দাভিদ জোসেফ এজরা এবং এজেকিয়েল জুডা এর নির্মাণ করান। পরে আবার ইলিয়াস শ্যালোম গাবে এর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করেন।
বেথ এল সিনাগগ, পোলক স্ট্রিট, কলকাতা।
ডোমের সিলিংয়ে নীল রঙের মাঝে সাদা বিন্দুগুলি নীল আকাশ ও জ্যোতিষ্কদের প্রতীক।
বেথ এল সিনাগগ।

বেথ এল সিনাগগের অন্দরমহল।

দোতলার মহিলা গ্যালারি। বেথ এল সিনাগগ।

          রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪.৩০ পর্যন্ত সিনাগগের ভিতরে যাওয়া যায়। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। ওখানে মাথায় দেবার টুপি রাখা আছে, টুপি পরে ভিতরে যাবার নিয়ম।
       ছবি তুলতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য সিনাগগগুলির ভিতরের দৃশ্য সম্পদ হতে পারে। রঙ্গিন কাঁচের মধ্যে দিয়ে আলোর খেলা, উপর থেকে ঝোলা ঝাড়বাতি, অসীম নৈঃশব্দ্য- অন্তত একবার যেতেই হবে চিরচেনা এই জায়গায়।
রঙিন কাঁচের মধ্যে দিয়ে আলোর মায়ার খেলা।
মাগেন দাভিদ সিনাগগের দৃশ্য।

        চারজন বা তার বেশিজন একসাথে যেতে গেলে অনুমতি লাগে। সেই ইমেইল আইডি নীচের ছবিতে দেওয়া আছে। নিয়মাবলী:

       খুব কম লোক যান বলে অনেকসময় রক্ষী সামনাসামনি থাকেননা। আমি যেমন নেভে শ্যালোম দেখতে পাইনি। এই একটাই অসুবিধা। বাকিটা শুধু অন্য একটুকরো কলকাতার নীরব ছবি।

কমেন্টে আপনার মতামত জানান।

আরো বিশদ তথ্যের জন্য রইল উইকিপিডিয়ার লিংক

Kinnaur Calls... A Trip to Kinnaur



      A trip to Kinnaur, Himachal Pradesh, India


Kinnaur at its best...View at Sangla
                  A click on this video may be helpful.
      There is a term, "Mountain calls", we must have heard it. Kinnaur was a remote place in the lap of Shivalik ranges of the Himalayas, which was hardly visited by most of the travellers due to lack of communication. From the ages of the epic Mahabharata, the villages and people of Kinnaur were covered with mistry. An inner line permit was required from the govt to enter the Kinnaur district till 1992. But now it is easy to visit.

     Arid mountains, covered with snow, this is the main feature of the mountain ranges in Kinnaur. View of Sreekhand and Kailash peaks may be a lifetime experience for the viewers. Kinnaur is the gateway to reach the Spiti valley.
Gorgeous peaks from Kalpa, Kinnaur

     Ten to twelve days are required for a trip to Kinnaur. An itinerary is given below for ready reference. For all the fellow viewers, the entry point of this trip is set at New Delhi, capital of India.


Day 1. Reach Shimla(capital of Himachal) from New Delhi. By train reach Kalka at first, then board toy train to reach Shimla. Otherwise, from Chandigarh, Shimla can be reached by bus or hired cab. Visit local market, Kali temple, mall etc at Shimla. Spend the first night at Shimla.
In front of Chail Palace, Chail. This was shown as the house of Ranchhordas Chanchad in the movie Three Idiots.

The village of Narkanda


Day2: Leave Shimla to visit the lush green hamlet of Chail, a small village where one can enjoy solitude before reaching the Chail Palace. It was built by Maharaja of Patiala and is a luxury stay now a days. A temple named Kali ki tibba will fill one's mind with peace. Panoromic view of the whole valley may be seen from the temple. In the festive weeks, a free lunch is available here.

      Therefore, it's time to proceed to another hamlet Narkanda for night stay.
Hatu peak, Narkanda

Hatu, 2nd highest peak of this circuit


Day 3: Hatu peak is the second highest peak (3400 m altitude) in this circuit. Start for Hatu Peak in the morning through a narrow, steap, tree-shaded path. The panoramic view from Hatu peak is a real treat for eyes. There is also a temple of the goddess Hatu Mata.

      Now proceed for Sarahan via Rampur and Jeori.
The scene of both the sides of the road may be enjoyed. The roadside scenes are going to be one of the lifetime experiences.

        Sarahan is famous for Bhimakali temple, built by Bushahar rulers. This is one of the fifty one shakti peeths in India. It is famous for its unusual and unique wooden architecture.

        White snow covered peaks surround the village of Sarahan. A gentle walk through the village would be great before the sun sets.
Bhimakali temple, Sarahan



Day 4 : Today's destination is Sangla. After leaving Sarahan, proceed for Taranda Mata temple on the NH22, where everyone is used to worship the goddess before entering Kinnaur district. From here, a gigantic but calm look of mountain ranges can be seen. River Sutlej would be flowing side by side. Here is a check point where the permit and other documents of the vehicles and the passengers are checked by police.

     Here roads are made out of the rocks by explosion. Road construction works are seen almost everywhere near Karchham and Wantoo. So the road is dusty. Hydel power projects are also running on Sutlej.

      Viewers, welcome to Tukpa Valley. It's the gateway of Sangla. Rough soil, dry climate, fewer greeneries, higher ranges of mountains, local people, a small market place, delicious local dishes, simplicity of local children– you will start loving this Kinnaur village.

       When we visited Sangla, we met the postmaster of Sangla Post Office. Due to network problem, our mobile sets were not working and we did not find any STD booth. So, we went to post office for some help. Postmaster allowed us to call my father. Knowing that I was also a postal employee, postmaster greeted us and offered evening tea, I felt very honoured by getting such warm welcome far from my home.

      Stepping down along the narrow steap muddy paths, valley of river Baspa can be reached. Every small cottage of local people is made of wood. Their gardens,filled with beautiful pink flowers, look great.

       Sangla is very cold at night. Snowfall may happen in April or November.
River Baspa, at Chitkul

Nature creates her own magic


Day 5: Morning at Sangla welcomes the visitor with silver snow peaked mountains. Have a breakfast in any Tibetan cafe and drive for Chitkul via Rackcham. Rackcham is a less crowded village between Sangla and Chitkul. Snow is seen here and there on the roads, on the roofs of the cottages, on the rocks and on the leaves of the trees.

      The driver should be experienced in driving in such slippery roads.

       Chitkul is the last village of India before the Tibet border. Inhabited by very few people, chitkul is basically a camp of ITBP. Stormy wind and utter solitude are the best attractions of Chitkul. There is a school near the cascading river, the riverbed is covered with stones and white pebbles. This river Baspa reminds the view of the river Leedar in Kashmir.
Snowcladed mountains at Chitkul

       Lunch may be taken at Chitkul. Now it is time to come back to Sangla.

        Kamroo fort of Busahar kingdom may be visited by trekking for half an hour. Excellent wooden architecture of the fort and other temples are marvellous. Bird's eye view from the yard of the fort is simply mesmerizing.

       Spend the second night at Sangla. One can opt for staying at Rakcham or in a tent at Chitkul.

Day 6: Now it is time to reach Kalpa, the most serene and most aloof place from outer society in this Kinnur circuit. The name KALPA may have come from the word KALPANA, which means imagination. Really, one who has not come here, can't imagine the serenity, beauty and mystry of this place.
Just before the sunset, Kalpa

Village Chini, near Kalpa


       The Kailash peak is seen clearly from Kalpa. There is a village Chini in the lower part of Kalpa. Some Hindu and Buddhist temples in the locality is the main attraction of Chini. All the temples are well decorated, and at par of the natural beauty over there.

Day 7: A very deadly turn of road towards the village Roghi is known as Suicide Point. The view of suicide point would make one spellbound for a while. Crossing this point, you would reach Roghi. It's a hamlet near Kalpa before the dense forest starts. It's picturesque view will compel you going on clicking incessantly.
Village Roghi, Kalpa

Village Roghi, near Kalpa

       Actually no word is enough for describing the scenery of Kalpa. If Kashmir is the Paradise on Earth, Kalpa is the Heaven itself.

Day 8: In the course of return, visit the Buddhist Monastery and the Durga Temple of Recong Peo, the administrative HQ of Kalpa. The gigantic and tall statue of Lord Buddha is the main attraction of this monastery. Chilagoja, a rare and expensive fruit is given as prasad here.

      Stay at Rampur/ Sarahan at night.
Temple of Recong Peo

Top of the monastery of Recong Peo


Day 9: In the morning, visit Padam palace of Rampur, and proceed for Shimla for night stay. You will have enough time for shopping, if you are interested in it.

Day 10: Reach Kalka or Chandigarh before evening, for boarding Kalka mail and reach Delhi on the next day.

If you can manage an extra day, you may pay visit to thr Viceroy's house (where the historic Shimla Pact took place), Tara Devi Temple and Zakhu hills of Shimla.

Just enjoy the virgin nature, solitude and tranquility of the whole Kinnaur circuit.

Few points

Where to stay:

Shimla: There are a number of hotels near mall. Also a YWCA guest house is there just opposite of the BSNL office, which is very cheap, (INR 750/- per night).

Narkanda: Hotel himalaya inn or hotel Sara, both are located near bus stop. Very comfortable stay within INR 1000/- –1500/-.

Sarahan: Hotel Sagarika, within INR 650/- –1200/-.

Sangla: Baspa guest house,price INR 650/- approx.

Kalpa: Hotel Apple Pie, very good to stay, ( INR 1200/-).

Besides, there are numerous hotels where you can fix the rate by bargaining. Also, you may choose hotels from Himachal Pradesh Tourism Development Corporation (HPTDC).

A link may be useful:

What to eat: Delicious Tibetan dishes are available. Momo, tukpa, noodles must be tried.

Not to do: Don't break the silence in the premises of  temples and monasteries. Don't hurt the cultural belief of local people. Not to pluck flowers and apples from plants and trees. Since this is a hilly region, driving at night is not recommended at all.

This is all I have shared with you. Now it's your turn to pack the rooksack and set out for Kinnaur.

–Ritwik Bhattacharya.


সাঁচিস্তুপ এবং বিদিশা Sanchi Stupas and Vidisha

               * ইতিহাসের সাঁচি, বিদিশা *
      Historical Sanchi Stupa and Vidisha

         বেরিয়েছি মধ্যপ্রদেশ ঘুরতে। পুরো মধ্যপ্রদেশ তো চারবার ঘুরেও শেষ হবার নয়, তাই এবার দিন পনেরোর ছুটিতে ইন্দোর থেকে শুরু করে উজ্জয়িনী মান্ডু ওমকারেশ্বর হয়ে কালই ভোপাল এসে পৌঁছেছি। আজ সাঁচি যাওয়ার গল্প।
    
         কি আছে সাঁচিতে, সেই তো ক'টা ভাঙাচোরা বাড়িঘর, শিপ্রা এক্সপ্রেসে বসে এক ভদ্রলোক বলেছিলেন। চিরকালই দেখেছি, আমার যা পছন্দ, লোকের তা পোষায় না। সেই বদনাম সঙ্গী করেই আজ দেখলাম সাঁচি স্তুপ, উদয়গিরি, বিজামন্ডল আর হেলিওডোরাস পিলার।

      বেরিয়েছিলাম ভোপাল থেকে বাস ধরতে, কিন্তু বেড়াতে এসে বাস চাপতে আর ইচ্ছে করলনা, তাই অটোর সঙ্গে দরাদরি শুরু করলাম। শেষকালে ইরফান ভাই ১২০০ টাকায় সাঁচি, উদয়গিরি, বিদিশা নিয়ে যাবে বলল। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া খেতে খেতে ভোপাল-বিদিশা রোড ধরে সাঁচির দিকে চললাম।

        ঘন দাড়ি, চোখে সুর্মা পরা ইরফান ভাই প্রায় কথাই বলেনা। চলতে শুরু করার প্রায় এক ঘন্টা পর প্রথম কথা বলেছিল, কর্ক রেখা দেখনা হ্যায়? আমি কর্ক বুঝিনা। কেয়া কেয়া করতে করতেই দেখি ঘ্যাঁচ করে রাস্তার ধারে একটা বোর্ডের পাশে অটো দাঁড়িয়ে গেল। রাস্তার দুপাশে দুটো প্রস্তরফলক রাস্তার দৈর্ঘ্যের সাথে তীর্যক ভাবে টানা দুটো সমান্তরাল সরলরেখার দ্বারা যুক্ত হয়েছে। ফলকের ওপর লেখা ট্রপিক অফ ক্যানসার। পশ্চিমবঙ্গেও আছে, কিন্তু আমি এই প্রথম দেখলাম কর্কটক্রান্তি রেখা।


        সাঁচিতে ঢোকার খানিক পরেই ডানদিকে অনেক উঁচুতে ছোট্ট করে উঁকি দেয় বিশ্ববিখ্যাত বৌদ্ধস্তুপ। ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়, গাড়ি বা অটো সোজা উঠে যায় গেটের সামনে। চোখের সামনেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। সেই সুপ্রাচীনের সামনে মুখের কথা সরেনা, না সরাই ভালো।

        প্রথমেই চৈত্যগিরি মন্দির, মহাবোধি সোসাইটির এই মন্দিরে রয়েছে সারিপুত্ত ও মোদগলায়নের অস্থি অবশেষ। লন্ডন থেকে প্রথমে ১৯৪৭ সালে শ্রীলঙ্কায়,পরে ১৯৫২ সালে ভারতে নিয়ে আসা এই অস্থি ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এটি একটি মিউজিয়াম।
                             মহাবোধি চৈত্য

         আর অসংখ্য ছবিতে, টাকার গায়ে আমরা যা দেখি, সেই খ্রী:পূর্ব ২য় শতকের সম্রাট অশোক নির্মিত সাঁচিস্তুপ আজও ২৩০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে মৌনমুখর। মৌর্য থেকে শুরু, তারপর সুঙ্গ রাজাদের সময়ে দ্বিতলে ওঠার সিঁড়ি, তোরণ ও স্তম্ভগুলি, সাতবাহন রাজাদের সময়ে প্রবেশদ্বারগুলির কারুকার্য- এইভাবে নানা সময়ে নানা সংস্কৃতির প্রভাবে আজকের আকার নিয়েছে ভগবান বুদ্ধের অস্থির ওপর নির্মিত ইঁটের নিরেট অর্ধগোলক সাঁচিস্তুপ। তোরণের গায়ে রয়েছে বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ন ঘটনাসমূহ। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর অস্থির অধিকার নিয়ে বিরোধ চলছিল মল্ল ও কুশীনগরের মধ্যে। সেই ঘটনাও ছবি হয়ে আছে তোরণের গায়ে। গ্রীক প্রভাবিত গান্ধার শিল্পকলার ছাপ মূর্তিগুলিতে। ব্রাহ্মী লিপিতে কত কি লেখা, গাইড কিছু কিছু বলেছিলেন, কিন্তু মনে নেই এখন। আমার বরাবরের ধারণা ছিল, স্তুপের মধ্যে বুঝি ঢোকা যায় মন্দিরের মতো, কিন্তু দেখলাম পুরোটাই নিরেট। কোনো দরজা নেই। অশোকের তৈরী স্তুপ ছিল এর অর্ধেক আয়তনের প্রায়, পরে সুঙ্গযুগে স্তূপটিকে পাথর দিয়ে আবৃত করা হয়। বর্তমানে সেটিই দেখি আমরা।
বিশ্ববিখ্যাত সাঁচিস্তুপ

স্তুপের একটি তোরণ।


       একইরকম কিন্তু ছোট কতকগুলি স্তুপ রয়েছে আশেপাশে। এগুলি বুদ্ধের শিষ্য বা সাঁচিতে পাঠরত ভিক্ষুদের স্মৃতিতে নির্মিত। একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মনেস্ট্রি, তার অনেকগুলি প্রকোষ্ঠ, সেগুলি বুঝি ভিক্ষুদের ধ্যান বা অধ্যয়নের জন্য ছিল এককালে। তারই পিছনে একটি বিশাল ইঁটের বাটির মতো পাত্র, মাধুকরীতে পাওয়া শস্য সেখানে এনে জমা করা হত।
প্রাচীন বৌদ্ধভিক্ষুদের শস্যাধার

একটি বড় জলাধারও ছিল। এছাড়াও বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির রয়েছে, গুপ্তযুগ থেকে প্রায় একাদশ শতক অবধি চলেছিল সাঁচিস্তুপের আশপাশের অজস্র নির্মাণ, তারপর কালের অতলে হারিয়ে যাওয়া।


        ১৮১৮। জেনারেল হেনরি টেলর প্রথম এই পরিত্যক্ত স্তুপটির কথা উল্লেখ করেন। তারপর ইতস্তত কিছু অনুসন্ধান চললেও স্যার জন মার্শাল (সবার জানা নাম, হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো, সারনাথের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের প্রধান) ১৯২০ সালের মধ্যে এই যুগান্তকারী ঐতিহাসিক কীর্তিটি পুনর্জীবিত করেন। ১৯৮৯ এ UNESCO সাঁচিস্তুপকে World Heritage Site এর স্বীকৃতি দেয়।


          কীসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ভাবলে গা শিরশির করে এখনো। অনেকটাই সময় নিয়েছিলাম ওখানে, বাইরে আসতে দেখি ইরফান ভাই কেমন উসখুস করছে। আসলে সেদিন ছিল শুক্রবার, ওর নামাজের দিন। বেলা ২.১৫ বেজে গেলে নামাজ পড়া হবেনা ওর। এবার একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, চ্যালেঞ্জই বলা যায়। এই পুরাতত্ত্বের দেশে মসজিদ পাওয়া মুশকিল। এদিকে আমরা উদয়গিরি হয়ে বিদিশা চলেছি। সহায় হলো গুগল ম্যাপ। উদয়গিরি যখন পৌঁছলাম তখন ১.২০ দুপুর। এখন বিদিশা যেতে ১৫ মিনিট লাগবে। সেখানে মসজিদ আছে। গুপ্তযুগের সমসাময়িক উনিশটি হিন্দু ও একটি জৈন গুহা নিয়ে উদয়গিরি। মোটামুটি পঞ্চম শতকের গুহাগুলির মধ্যেকার ভাস্কর্য আর নির্জন অনতিউচ্চ পাহাড়ের মধ্যে মধ্যে রহস্যময় গুহাগুলির আদিম গম্ভীর আহ্বানই উদয়গিরির মূল আকর্ষণ। কিন্তু ইরফান ভাইকে নামাজ পড়াতে না পারলে আমাদেরও মন খুঁতখুঁত করছে। তাই মিনিট ১০ থেকেই পাহাড় থেকে নেমে পড়লাম। আবার গুগল ম্যাপ দেখে চলা। বেতোয়া নদী পেরিয়ে গেল। ইরফানকে মসজিদের গলিতে পৌঁছানোর রাস্তা দেখিয়ে দিলাম ম্যাপ থেকে। সেখানে পৌঁছে তার মুখে হাসি ফুটল। তারপর আমাদের বিজামন্ডলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল নামাজ পড়তে। আমরাও শান্তি পেলাম।

বিজামন্ডল এর দুটি ছবি


       বিজামন্ডল হলো একাদশ শতকে পারমার রাজা নরবর্মণের সময়কার একটি মন্দির। মন্দিরের আশপাশে ছড়ানো অবস্থায় আজও পড়ে আছে স্থাপত্যের নানান নিদর্শন। মন্দিরটি সম্ভবত অসমাপ্ত অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছিল। একটি বাউলি আছে পাশে। আর সামনের দিকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের স্টোররুম। মন্দিরের বাগানটির দেখাশোনা করছে সদ্য চাকরি পাওয়া গার্ডেন ইনচার্জ, উত্তরপ্রদেশের ছেলে। যথারীতি কেন্দ্রের একের পর এক পরীক্ষা বাতিল হওয়া নিয়ে তিতিবিরক্ত। এখানে ফাঁকা মন্দিরে প্রচুর সময় পায়। বসে বসে পড়ে। সেই বলল, হেলিওডোরাস পিলার দেখে আসুন। আমি নেটে দেখেছিলাম। ভালো বুঝিনি। ছেলেটির কথায় বুঝলাম ব্যাপারটা।

      উত্তর-পশ্চিম ভারতে ব্যাকট্রিয়ান রাজাদের রাজত্বকালে অনেক গ্রীক রাজপুরুষ বা কর্মচারী ভারতীয় সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট ও অঙ্গীভূত হয়ে পড়েন। সেইরকমই একজন ছিলেন হেলিওডোরাস, ইন্দো-গ্রীক রাজা আন্টিয়ালসিডসের দূত। সুঙ্গ রাজা ভগভদ্রের সভায় দূত হিসাবে আসেন। বাসুদেব মন্দিরের সামনে তিনি এই গরুড় স্তম্ভটি ১১০ খ্রিস্টপূর্বব্দে নির্মাণ করেন। হেলিওডোরাস বিষ্ণুর প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, নিজেকে ভাগবত বলে পরিচয় দিতেন। এখন এই পিলারটি খাম্বা বাবা নামে পরিচিত। মূলতঃ মৎস্যজীবীরা এর উপাসনা করেন

হেলিওডোরাস পিলার

ব্রাহ্মী হরফে পালি ভাষায় উৎকীর্ণ লিপি। হেলিওডোরাস পিলারের গায়ে।

       ইরফান ভাই ফেরার পথে বড় দিলখোলা হয়ে উঠেছে। অনেকেই কথা বলছিল। আমাদেরও ভালো লাগছিলো, কোথায় না গিয়েছিলাম- কতকালের ইতিহাসের সামনে! কত ক্ষুদ্র আমরা, কত প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে কত সভ্যতা লীন হয়ে গেল, আর আমরা? শহরে মলের পর মল বানিয়ে ক্রেতা বিক্রেতা উপভোক্তা হয়েই বেঁচে রইলাম। এই সাঁচিতেই বিদিশার কন্যা দেবীর সঙ্গে অশোকের বিবাহ, আজকের দৈনন্দিন রোজনামচায়  ধুলোময় সাঁচি আর বিদিশাকে দেখলে কে বলবে!

        বিকাল পড়ে আসছে। ভারতেতিহাসের ধাত্রীভূমিতে পাঠানোর জন্য অদৃষ্টকে ধন্যবাদ।

কিভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে শিপ্রা এক্সপ্রেস ধরে                                ভোপাল নেমে রাত্রিবাস করুন।
                        পরদিন বাস বা অটো ধরে সাঁচি
                        বিদিশা ঘুরে নেওয়া যায়।
                        ইন্দোর থেকে ট্রেনে ভোপাল আসা                                যায়।
কোথায় থাকবেন: প্রচুর হোটেল রয়েছে ভোপাল                                      স্টেশনের কাছে। আগে থেকে বুক                                করার দরকার নেই।
কি খাবেন: মূলতঃ নিরামিষ খাবার মিলবে। তবে বেশ                    কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট রয়েছে ভোপালে।                      আমিষ পাবেন। বিদিশার বিজামন্ডলের                        কাছে হোটেল রয়াল প্যালেস খাবার জন্য                     ভালো।

                        –ঋত্বিক

Three days in Benaras and Lucknow.


বেনারস ও লখনৌ ভ্রমণ: তিনদিনের দিনলিপি।


নমামী গঙ্গে হয়ে কাবাবি তুন্ডের ডায়েরী।

২৩.০৭.২০১৮,সোমবার।বিকাল ৪টে।

উত্তরপ্রদেশে এক্সপ্রেস ট্রেনের স্লীপার কামরায় যাচ্ছি আর দুম করে লোকজন এসে সিট এ বসতে চাইছেনা, এটা হতে পারেনা,হয়ওনি। বেশ উঠেছিলাম বেলা ১২ টা ৫০এর বেগমপুরা এক্সপ্রেসে,যাবো লখনৌ।তো সুলতানপুর আসতেই অনেক লোকজন ধুপধাপ ট্রেনে উঠে জায়গা খুঁজতে লাগলেন।অনেক কাল পরে সাইড আপার সাইড লোয়ার টিকিট পেয়েছিলাম,এক মহিলাকে মাঝখানের জায়গাটা দিতেই হলো।তিনি আস্তে আস্তে সিটে থিতু হতে শুরু করলেন,আর আমাদের নিজেদের সিটেই আমরা পরবাসী হয়ে পড়লাম প্রায়।তা যাক,বেনারস থেকে লখনৌ মাত্র 5 ঘন্টার পথ,তার দুঘন্টা পেরিয়ে গেছে,এই পথটুকু বেনারসের গপ্পো করতে করতে কাটিয়ে দি, কেমন।









পরশু রাতে বিভূতি এক্সপ্রেসে ওঠার সময়েই দেখেছি- খুব বৃষ্টি হুগলী হাওড়া কলকাতায়। বেশ হয়েছে,এখানে ভেসে যাক,আমরা বর বৌ চললুম বেনারস।শাঁখ বাজিয়ে ট্রেন ছাড়লো,কামরার যাত্রীরা চকিতে যেযার বাড়িতে ফোন করে জানালেন,ট্রেন ছেড়েছে।এটা নাকি সঙ্গে সঙ্গেই জানাতে হয়। তারপর থেকে ভেবেই চলেছি - বেনারস নামবো,পান খাবো,রাবড়ী ,সরবত,কচুরি জিলিপি,গঙ্গার তাজা হওয়া- সব খাবো।
তিনঘন্টা দেরী করে ট্রেন যখন বেনারস ঢুকল,ভালোই রোদের তেজ তখন।
টোটোওয়ালা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে খানিক পয়সা খসালো।মানে সঠিক ঠিকানাটা আমিই বলতে পারিনি,অবশেষে গোধূলিয়া মোড় থেকে সোজা হেঁটে ডানদিক ও বাঁদিকে ইনসুইং আউটসুইং খেয়ে লক্ষ্মী গেস্ট হাউস পৌঁছলাম।বুক করা ছিল।স্নান সারলাম।হাতে একটা দিন মাত্র সময়,তাই মোটেই সময় নষ্ট করবো না,এরম সংকল্প নিয়ে খাবারের হোটেলের সন্ধানে চললাম।একটা বেশ সবুজ বারান্দাওলা বাড়ি,নাম লেখা দশাশ্বমেধ বোর্ডিং হাউস,ঢুকে পড়লাম।জয়বাবা ফেলুনাথে ফেলুদারা এখানেই উঠেছিলেন।বাঙালি হোটেল।অনেক বাঙালি পরিবারও ছিল।ভাবলাম, আগে জানলে এখানেই থাকতাম।মাছ ভাত পাওয়া গেলো।
এবার কয়েকপা হাঁটলেই দশাশ্বমেধ ঘাট।কয়েকটা স্বাস্থ্যবান ষাঁড় শিং দুলিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে । সিঁড়ি দিয়ে একটু নামতেই খোলা আকাশ,সাদা সাদা ইতিউতি মেঘ,ওপারে বালির চড়া,এপারে বাঁধানো ঘাটে অগুনতি নৌকা আর কুলকুলিয়ে বয়ে চলেছে পতিতপাবনী গঙ্গা।
        ছোট ,বড় - হাল বাওয়া,ভুট ভুটি হরেক কিসিমের নৌকা ঘাটে বাঁধা।কিছু যাবে ওপারে,বাকিরা ঘাট ঘোরাবে, মানে ডানপাশে হরিশচন্দ্র থেকে বাঁদিকে মনিকর্নিকা ঘাট অবধি ঘন্টাখানেক।দর হাঁকছে,ডাকছে রিজার্ভ এ যাবার জন্য।শেয়ারে ছোট নৌকা ১৫০ করে হাঁকছে,দরদস্তুর করে ১০০ টাকা মাথাপিছু মূল্যধার্য হলো।ছোট নৌকা,আমরা দুজন ছাড়া আর একটি পরিবার- দুই জন পুরুষ,একজন মহিলা, একজন বৃদ্ধা।সঙ্গে মাঝিভাই আমাদেরই বয়সী,জিন্স আর শু পড়া মাঝি দুহাতে বৈঠা বাইছে, এটা দেখতে বেশ লাগে।তবে ভরসা জাগেনা মোটেই,কারণ এটা শ্রাবণ মাস।ছলাতছলাত চলতে চলতে কখন যেন মাথার ওপর মেঘ কালো করে এসেছে,হাওয়ার বেগও বেড়েছে।মেঘ কেটে রোদ ও উঠছে,কিন্তু সে বেশিক্ষন স্থায়ী হচ্ছেনা।





          মোট ৮৮ টা ঘাটের মধ্যে ৪০টা দেখাবে।একে একে চলে যাচ্ছে শীতলা অহল্যাবাই চৌষট্টি দিগপাতিয়া রাজা নারদ মানসরোবর কেদার আরো কত ঘাট।হরিশচন্দ্র ঘাট থেকে নৌকা ঘুরে গেল।এবার মনিকর্নিকার দিকে যাবে।এদিকে বেশ মেঘ করেছে।উল্টোদিক থেকে জোর হাওয়া বইছে।মাঝিভাই হাঁফিয়ে উঠছে।জলের ঢেউও বেশ নাচছে।ছোট নৌকায় জলের ধাক্কা বোঝা যায় বেশি।পাশ দিয়ে একটা বড়  ভটভটি নৌকা এলে হাল রেখে দিয়ে মাঝি উঠে পড়ল সেটায়।ভটভটির কাছির সঙ্গে আমাদের নৌকোটা বেঁধে নিলো।একে নৌকা দুলছে,তার ওপর মাঝি লাফ দিয়ে যাচ্ছে আসছে,সে এক দেখার মতো ব্যাপার।তার হাল আবার একবার জলে পড়ে গেলো।তোলা হলো।আমাদের নৌকা এখন ভটভটির টানে ভাসছে,গতিও সেরকম।পাশ দিয়ে রাজেন্দ্রপ্রসাদ,মানমন্দির,মীর,ললিতা,জলসেন ঘাট চলে গেল;আমরা একবার ঘাট দেখছি,একবার আকাশ,একবার জলের দাপাদাপি।মনিকর্নিকায় মেঘটা কেটে গেল।জল শান্ত হলো।ভটভটির মাঝি আমাদের নৌকাটিকে ছেড়ে দিলো এবার।এত চিতা জ্বলছে,জ্বলার অপেক্ষায় আছে,দেখলে মনটা কিরম একটা লাগে।কিছুপরেই নৌকা দশাশ্বমেধ এ ফিরে এলো।
          সবে পৌনে পাঁচটা বিকাল। এরইমধ্যে কিছু কিছু লোক এসে বসছে ঘাটে।ঘাটের বেদীগুলো ধোয়ামোছা হচ্ছে।কিছু চেয়ার সাজানো হচ্ছে।ভাবলাম হয়তো পুরীর মতো,বসলে পয়সা লাগে।ওদের জিজ্ঞেস করতে বললো,পয়সা লাগবেনা।তারপর ঘাটের যে চাতালগুলোয় গদি পাতা আছে,সেখানে বসতে।ভালোই হলো- একদম সামনে থেকে আরতি দেখা যাবে।
            বিকেল হেলে পড়েছে সন্ধের দিকে,নদীর জল সোনালী হয়ে উঠেছে।একখণ্ড মেঘ দেখা গেল কোনার দিকে,বউ বলল,ঠিক যেন একটা শ্বেতভল্লুক মুখ ঘুরিয়ে দেখছে।সত্যিই সেইরকম।গঙ্গারতির আয়োজন চলছে।একটা বড় পাত্রে করে ফুল এনে রাখলো একজন।সেগুলোর বৃতি থেকে পাপড়ি আলাদা করতে বলল। আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন আরো অনেক মহিলা ও পুরুষ।তাদের সঙ্গে আমরাও হাত লাগলাম।অজস্র লাল পাপড়ি ছোট ছোট পাত্রে সাজিয়ে সবকটা বেদিতে সাজানো হলো।গঙ্গায় অঞ্জলি হবে এই ফুলে।সারা আকাশ নদী এক হয়ে গেল ঘন নীল রঙে।পিছনে  অসংখ্য দর্শক আর সামনে মা গঙ্গাকে রেখে সমবেত শঙ্খধ্বনি আর পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে শুরু হলো গঙ্গারতি।
ধূপ, প্রদীপ আর ময়ূরপেখমের আরতি দিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট চললো আরতি।একদম সামনে বসে দেখলাম।


            ঘাট থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটলেই পানমশলা আর জর্দার দোকান।দাশগুপ্তের জর্দা,অনিলের জর্দা ইত্যাদি।বয়ামে বয়ামে রঙ্গিন রঙ্গিন মশলা,কেনার আগে ফ্রীতে অল্প অল্প চেখেও নেওয়া গেল।কিন্তু রবিবার হওয়ায় গোধূলিয়ার রাবড়ী কচুরির দোকান খোলেনি।খানিক হতাশ হয়ে আশপাশের কিছু শাড়ির দোকান দেখতে দেখতে এগোতে লাগলাম।
দুটো দোকান ঘুরে বৌ একটা বেনারসি শাড়ি কিনলো।দাম গড়িয়াহাটের একচতুর্থাংশ।
শাড়ি কিনতে চাইলে কিন্তু অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যেতে হবে।অনেক শাড়ির মহল্লা ঘুরে দেখা যায়।আমাদের হাতে সময় কম ছিল।
কিন্তু তারপরেই ঘটলো বিপত্তি।শাড়ির প্যাকেট হাতে ঝুলিয়ে বিজয়গরবিনী বৌকে নিয়ে হোটেলে ফিরছি,শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি।কি বৃষ্টি!
কিছুক্ষনের মধ্যেই রাস্তা জলমগ্ন।প্রবল ভীড়াক্রান্ত পথে বিশ্বনাথ মন্দিরের দিক থেকে হু হু করে জল আসছে।শাড়িটাকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে চলেছি।আমাদের হোটেলে ঢোকার গলিতে প্রায় হাঁটুজল।দাঁড়িয়ে রইলাম একটা দোকানে।এখানেই আমার জীবনের একটা অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।
বৌ আমাকে বলছে যে কেউ যদি বাইকে করে এইটুকু পথ পার করে দেয়।কিন্তু সে আর কাকে বলবো।আর ছেলেদের কথা কেই বা কবে শুনেছে।তাই বললাম,তুমি বলো।কাজ হতে পারে।সে দোকানের একজনকে বললো।কিন্তু সে কিছু সুরাহা করতে পারলো না।অগত্যা আমি রাস্তার মাঝখানে ভিজতে ভিজতে এসে দাঁড়িয়ে একজনকে অনুরোধ করলাম।এরা স্থানীয় মানুষজন।দেখছি কি করা যায় বলে তিনি একটি ছেলেকে বলে দিলেন,সে তার বাইকে করে আমাদের এক মিনিটে পৌঁছে দিলো।এই তীব্র দুর্যোগের মধ্যে আমার প্রাপ্তি এটাই যে, ব্যাংক,পোস্ট অফিস,ফ্ল্যাটের প্রমোটার,কলের মিস্ত্রি - কেউ যখন একবার অনুরোধে কান দেয়না,তখন ওই ভদ্রলোক একটা বাইক ঘুরিয়েছিলেন আমি একবার মাত্র বলায়।
আবার আমি বেনারস যাবো,ভেবে রেখেছি তখনই।
কিন্তু রাত ৯টা।যা বৃষ্টি,তাতে বৃষ্টি থামার একঘন্টা পরেও জল নামবে কিনা সন্দেহ।রাতের খাবার কোথায় পাই।এই হোটেলে খাবার মেলেনা তবে একজন বললো,চাইলে নীচের দোকান থেকে ইডলি দোসা এনে দেবে।তাই দাও ভাই।সে এনে দিল।অতি সুন্দর লাগলো খেতে।সেই ছেলেটিই বলে দিল,যেহেতু শ্রাবণ মাস এবং আগামীকাল সোমবার,তাই ভিড়ের সম্ভবনা খুবই, অন্তত সকাল ৪.৩০ এ বেরিয়ে পড়া উচিৎ মন্দিরের উদ্দেশ্যে,যেহেতু আমাদের কালই লখনৌ যাবার ট্রেন।

তাই একদম ভোরবেলা স্নান করে বেরিয়ে পড়লাম কাশী বিশ্বনাথের দিকে। তখন রাতের অন্ধকার ফিকে হচ্ছে একটু একটু,কুকুরগুলো গুটলি পাকিয়ে রাস্তায় শুয়ে,ঝিরঝির করে হাওয়া বইছে,শিরশিরে ভাব একটা- তার মধ্যেই কিছুজন মন্দির থেকে ফিরছে।৩টে থেকে ৪টে অবধি  মঙ্গল আরতি।তারপরেই পুজো দেওয়া শুরু হয়।আমরা গলিপথে হাঁটতে শুরু করলাম।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙগের অন্যতম এই কাশীধাম।যার উল্লেখ পাওয়া যায় স্কন্দ পুরাণে।গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরের মতোই কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরও ধ্বংস হয়েছে বারবার।প্রথম মহম্মদ ঘুরীর সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবক মন্দির ধ্বংস করার পর ইলতুতমিসের সময় নতুন করে গড়ে ওঠে। আবার সিকান্দার লোদী র সময় ধ্বংস, ফের আকবরের সময় মানসিংহ,টডোরমলের হাতে পুনরুত্থান । ঔরঙ্গজেব মন্দিরের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।মারাঠা শাসনকর্তা মলহার রাও হোলকার মসজিদ ধ্বংস করে মন্দির পুনর্নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেন,কিন্তু সেটা সফল হয়নি।অবশেষে ১৭৮০ সালে তাঁর পুত্রবধূ অহল্যাবাই হোলকার বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন।আজকের যে মন্দির দেখি আমরা,তাতে নানাভাবে গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া, নাগপুরের ভোঁসলে, নেপালের রাজা প্রমুখেরও অবদান রয়েছে।
শক্তি আর ভক্তির লড়াই বোধহয় চিরকালই চলতে থাকবে।আর ভক্তিই জিতবে শেষ অবধি,নাহলে এই ভোরবেলা বৃষ্টির ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করে এত লোক লাইন দিয়েছে কেন।পুজো দেওয়ার সামগ্রী,প্রসাদ মন্দিরের গলিতেই পাওয়া যাবে।
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই বাবার দর্শন মিললো।পুজো দিয়ে ফেরার পথে অন্নপূর্ণা মন্দির।দুপুরের ভোগ খাওয়া এযাত্রা হবেনা,তাই চাল প্রসাদিই খেলাম একমুঠো।যাক,অন্নপূর্ণার প্রসাদে উপবাস ভঙ্গ হলো।

যাক,সময় হাতে আছে অনেকটাই।একটা অটো ভাড়া করলাম গোধূলিয়া থেকে।বিএইচইউ,সঙ্কটমোচন, দুর্গামন্দির,তুলসীদাসের মন্দির দেখতে যাব।রফা হলো ৩০০ টাকা।ঘন্টাখানেক কি দেড় ঘন্টাটাক সময় লাগবে। মদনমোহন মালব্যের স্মৃতিবিজড়িত বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি- বিশাল জায়গা নিয়ে বহু বিষয়ের ওপর পড়াশুনা হয়।দেশজোড়া নাম।সেখানে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি,একটা পাক ঘুরে আসা হলো।নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মতো লাগলো আমার একঝলকে।কিম্বা ভাদোদরায় ডিপার্টমেন্ট অফ পোস্টের যে ট্রেনিং সেন্টার,তার মতো।নিজেই একটা গ্রাম।
সঙ্কটমোচন মন্দিরে বাজরংবলী পূজিত হন।কয়েকটি বাঁদর প্রসাদী লাড্ডু খাচ্ছে মন দিয়ে।২০০৬এর বিস্ফোরণের পর থেকে প্রবেশপথে একটা পুলিশচৌকি বসেছে।
পরের গন্তব্য রামচরিত মানসের রচয়িতা তুলসীদাসের স্মৃতিতে নির্মিত তুলসীমন্দির।হাওড়ার সুরেকা পরিবার ১৯৬৪ তে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।মন্দিরের দেওয়ালজুড়ে দোঁহাগুলি লেখা রয়েছে।আর আছে রামায়ণের ওপর তৈরি বেশ কিছু মডেল।
শেষ দ্রষ্টব্য দুর্গামন্দির। মা দুর্গাকে প্রণাম করে আমরা ফেরার পথ ধরলাম।

অটো আবার আমাদের গোধূলিয়ায় নামিয়ে দিল।বাঁশ ফটক গলির দিকে নাকি ভালো খাবার পাওয়া যায়।
কিন্তু গলি আর কই, এ তো রাজপথই।গল্পে পড়া বাঁশফটক গলি যে বড়ই অচেনা।নাহ বাঙালীর চেনা পুরানো জায়গাগুলোকে ঐভাবে আর পাওয়া যাবেনা। ঘাটশিলাও না,এখানেও না।
মধুর জলপান নামে একটা দোকানে ঢুকলাম।নামটা শুনেই মনে হলো কোনো বাঙালি দোকান ছিল হয়তো আগে এটা,এখন হাত বদলেছে।কিন্তু কচুরি জিলিপি দুটোই বেশ ভালো লাগলো খেতে।আর ভালো হলো,এদের জলটা।গোলাপ জল দেয় এরা।আহা।মনটা খুশি হয়ে গেল।সেই খুশিতে একগ্লাস গোলাপ সরবত খেয়ে নিলাম।বৌ খেলো পেস্তা সরবত।এখানে সরবত খুব চলে।

আরো একদফা গঙ্গার হাওয়া খেয়ে বেনারসকে টাটা করে এখন বসে আছি লখনৌগামী ট্রেনে। দু একবার ময়ূরের কেকা শোনা গেছে। সুলতানপুরের আগে থেকেই ধু ধু প্রান্তরে দু একটা ময়ূর দেখেছি। কয়েকটা প্যাঁড়া কিনেছিলাম বেনারস থেকে।টুকটুক খেতে খেতে প্যাকেটটাই ফুরিয়ে গেল।নাহ,বেনারসের অনেক কিছু দেখা বাকি রয়ে গেল।আবার আসতে হবে।সারনাথ, এলাহাবাদ যাওয়া হবে সেবার।জয়সিংহের মানমন্দির,গলি,তস্য গলি,রাবড়ী- সব হবে সেবার।
আর খানকতক ষাঁড়ের ছবিও তুলতে হবে,যা রাজকীয় ষাঁড় সব দেখলুম,অপূর্ব।


২৪শে জুলাই,২০১৮।রাত ১১টা।
লখনৌ পৌঁছেছি গতকাল বিকালে।ক্লান্ত ছিলাম।উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল গোমতীর  রেস্তোরাতেই  নানান উপাদেয় খাবার মেলে।সেই খেয়ে একটা নরম তুলতুলে ঘুম।
বেনারস থেকে গতকাল আসা ইস্তক দিব্যি আছি।
   এখান থেকেই ইউপি ট্যুরিজম এর এসি বাস ট্যুর হয়। মাথাপিছু 385 টাকা।সকাল ১০ টা থেকে মোটামুটি ২ টো অবধি।গাইড সঙ্গেই থাকবেন।
   আমরাও কাল সেই টিকিট কেটেছিলাম।আজ সকালে আমাদের সঙ্গে ওই বাস এ সঙ্গী হলেন ত্রিপুরার এক মধ্যবয়স্ক দম্পতি আর তাদের মেয়ে জামাই,তাঁরা কর্মসূত্রে বরোদাবাসী। তাঁদের বাচ্চাটি বেশ মিষ্টি।
প্রথম গন্তব্য নবাব গাজী উদ্দিন হায়দার নির্মিত ইমামবাড়া শাহ নজফ।এখানেই রয়েছে তাঁর এবং তাঁর তিন বেগম এর সমাধি।হজরত আলীর সমাধির আদলে একটি রেপ্লিকাও রয়েছে।লাগোয়া বাগানে কয়েকটা রাজহাঁস খেলে বেড়াচ্ছে।
 এরপর গেলাম রেসিডেন্সি।শহরের প্রাণকেন্দ্রেই এই জায়গাগুলো।বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীন ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের এই ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে ১৮৫৭ মহাবিদ্রোহের গোলাগুলির আঘাত বুকে নিয়ে।একটা ভবনকে মিউজিয়াম বানানো হয়েছে।তাতে রয়েছে বেগম হজরত মহল, রাণী লক্ষ্মীবাই,নবাব সাদাত আলী খান,সুজাউদ্দৌলা প্রমুখের ছবি,কিছু ব্রিটিশ সেনা অফিসার এর লেখা চিঠি,পুরো অঞ্চলটার একটা মডেল ম্যাপ ইত্যাদি।অসম্ভব গম্ভীর কিন্তু সুন্দর অনুভূতি।খন্ডহর হয়ে যাওয়া বাড়ি গুলোয় কখনো বা গা ছমছম করে।
     এরপর নবাব আসিফুদ্দৌলার বড়া ইমামবাড়া - যাকে বলে দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।মানে একটা তোরণ পার হয়ে পরের তোরণ।সেটা পার করলে তবে আসল জিনিসের দেখা মিলবে। একইসাথে আসিফি মসজিদ।গোল করে একপাক ঘুরলেই মনে হয় কি বিশাল ব্যাপার।আর সামনেই সেই বহুশ্রুত ভুলভুলাইয়া।ভুলভুলাইয়ায় ঘুরপাক খেতে খেতে ছাদে উঠে চারপাশের শহর দেখা যায়।শোনা যায়,সৈন্যরা নাকি ওই অন্ধকার জানলায় বসে নজর রাখত বাইরে।কুলুঙ্গিতে জ্বলত প্রদীপ।পালানোর জন্যে ছিল অনেক সুড়ঙ্গ।সেগুলো নাকি এখন বন্ধ করা আছে।এদিকের দেওয়ালে শব্দ হলে ওদিকের দেওয়াল সাড়া দেয়।দেওয়ালেরও কান আছে।গাইডের পিচুপিছু আমরা লাইন দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে থাকলাম।অন্ধকার ঘুপচি রাস্তা।মাঝে মাঝে কোথা থেকে যেন আলো আসে।গাইডবাবু আবার মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যান।আমরা যেই একদিকে পা বাড়াই, অন্ধকার কোনো এক গলির মুখ থেকে তিনি মুখ বাড়িয়ে বলেন,ওদিকে না ভাইসাব,এদিকে আসুন।কোনদিক দিয়ে তিনি যে আগে আগে পৌঁছে যাচ্ছেন,সেটাই যেন ধাঁধা একটা।সেইভাবে ওঠা গেল বড়া ইমামবাড়ার ছাদে।চারপাশের দৃশ্য দারুন বললে কম বলা হয়।গাইড না ডাকলে আমরা ওখানে আরো যে কতক্ষন বসেই থাকতাম তার ঠিক নেই।ভিতরে থাকলে বোঝা যায়না বাইরে কত জনবহুল ব্যস্ত শহর।আর বাইরে দাঁড়িয়ে বোঝা যাবেনা ভিতরটা কত নিঝুম।








 এরপর রুমি দরওয়াজা। পুরানো লখনৌ এর প্রবেশদ্বার।পূর্ব রোমান বা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের তোরণের আদলে তৈরী বলে এমন নাম।বড় রাস্তার ওপরেই বড়া আর ছোটা ইমামবাড়ার মাঝামাঝি এর অবস্থান।অনেকে বলেন কবি জালালুদ্দিন মহঃ রুমির নামে এর নাম।
পাশেই নাসিরউদ্দিন হায়দারের তৈরী ঘন্টাঘর।অযোধ্যার নবাবদের তৈলচিত্র সমন্বিত পিকচার গ্যালারী।
    পেটের খিদে চাগাড় দিচ্ছিল ততক্ষনে।দুপুর ২ টা।বাস আমাদের পরিবর্তন চকে নামিয়ে দিল।খাওয়ার পর দেখি সঙ্গের সেই বরোদার দাদা দাম দিয়ে দিয়েছেন।কএকঘন্টার আলাপেই এতো মিশে যাবেন ওরা কে জানতো।এমনিতে আমি কিপটে মানুষ।এই ঘটনায় আমার বৌএর সেই বিশ্বাস আরো পোক্ত হলো।
ওনারা চলে গেলেন । আমরা টোটো চেপে আমিনাবাদ চললাম।চিকন এর কাজের দোকানে।দরদস্তুর নির্ভয়ে নির্ঝঞ্ঝাটে করা যায়।সে আর বাঙালী ভ্রমণ বাজারুদের নতুন করে বলার দরকার নেই।তা সে যাই হোক,আমি আমার লাইনে ফিরে আসি।
ওই আমিনাবাদে আছে তুনডে কাবাবি। গরীবের ,বড়লোকের,ব্যবসায়ীর,যুগলের সবার প্রিয় দোকান। ওখানকার তুনডে কাবাব নামকরা।ও হ্যাঁ, লখনৌতে মহিষের মাংসের কাবাব পাওয়া যায়।মুরগি মটন অঢেল।মনে কোনো দ্বিধা না রেখে চলে আসুন।আমরা ডেকার্স লেনের একটা আওয়াধি সংস্করণ দেখতে পেলাম এখানে।


    এই দোকান ওই দোকান ঘুরতে ঘুরতে কখন সন্ধ্যে পেরিয়ে গেছে।একটা রিক্সা নিয়ে আমরা লালবাগে চলে এলাম।নৈশভোজ এখানেই করার কথা।
      দ্য মুঘলস দস্তরখাঁ থেকে গালউটি কাবাব আর বিরিয়ানির স্বাদে গন্ধে উপুরচুপুর হয়ে যখন বেরোলাম তখন জোর বৃষ্টি পড়ছে।রাত দশটা।ভাবছিলাম এই বৃষ্টিতে কিকরে বেরোই।তো সঙ্গে সঙ্গে দেখি দরজার বাইরে থাকা রেস্তোরাঁর এক কর্মী বিরাট একটা ছাতা নিয়ে এগিয়ে এলেন।আমাদের দুজনকে ছাতার ছায়ায় নিয়ে একটা অটো দাঁড় করালেন।আমরা হোটেল গোমতী যাবো জেনে অটোচালক কে বলে আমাদের তুলে দিলেন গাড়িতে।এত ভালো লাগলো যে কি বলবো।হয়তো ওটা ওই দোকানের কাজেরই অঙ্গ।কিন্তু ওই বৃষ্টিতে যখন একটা রিক্সারও দেখা নেই,তখন এইটুকুই একটা বিরাট স্বস্তি দেয়,বিশেষত নতুন জায়গায় গেলে।
আপাতত হোটেলের বিছানায় বসে লিখছি।কাল বিকালেই ফেরার পথ ধরবো।
লখনৌতে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায়,বোঝাই যায় না।
 রিকশা অটো যা খুশি চেপে ঘোরা যায়।ভাড়া খুব বেশি না।স্থানীয় মানুষ,দোকানদার,পুলিশ সব্বার থেকে ভালো ব্যবহার পেয়েছি।
আর যেটা খুব নিশ্চিন্ত করবে সেটা হলো,কোনো চিকনের জামা কুর্তি বা সালওয়ার কিনে হোটেলে ফিরে যদি মনে হয়,এই যা,মাপ ভুল হয়েছে বা রংটা পাল্টালে ভালো হয়,নিশ্চিন্তে দোকানে চলে যান।ওরা বিনা বাক্যব্যয়ে পাল্টে দেবে আর প্রথমবারের মতোই উৎসাহ নিয়ে দেখাতে থাকবে।
  
ভাবছি শুধু এটাই যে,বেনারস আর লখনৌ এর দূরত্ব যদি এতটা না হতো,তবে তুন্ডে কাবাব খেয়ে একটা বেনারসী পান মুখে দেওয়া যেত।ব্যাপারটা দাঁড়াত,যাকে বলে, "ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টফিলিস"।

ঋত্বিক ভট্টাচার্য্য।


**********†********†*********†************†*********




এছাড়াও পড়তে পারেন
http://top-travel-places1.blogspot.com/2014/10/blog-post_72.html?m=1
Show quoted text

Bhimbetka Rock Shelters, Madhya Pradesh

#ভীমবেটকার গুহাচিত্র : গুহামানবের দেশে।

         সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর 'ভূপাল রহস্য' উপন্যাসে ক্লাস ফোরে পড়তে প্রথম নাম শুনেছিলাম। কাকাবাবু আর সন্তু পাঁচমারী না গিয়ে গিয়েছিলেন ভীমবেটকায়। অসংখ্য বাঙালি সেই প্রথম এই জায়গার নাম শোনে। কাকাবাবুর উপন্যাসে ভীমবেটকার গা ছমছমে বর্ণনা পড়ে ২০ বছর ধরে ইচছা ছিল আসার। এতদিনে সেই সুযোগ পেলাম। ভারতীয় উপমহাদেশে মনুষ‍্যপ্রজাতির আদিম, অরণ্যচারী পূর্বসূরীদের প্রথম চিহ্ন পাওয়া যায় মধ্য ভারতের এই পাহাড়ের গুহায়।
১৫.১২.২০১৮।

       ভূপাল থেকে একটা গাড়ি বুক করেছিলাম। সকাল ৭ টায় বেরিয়ে প্রথম গন্তব্য ছিল ভোজপুর। পারমার রাজা ভোজের নাম সারা মধ্যপ্রদেশেই খুব শোনা যায়। একাদশ শতকের এই রাজার আমলে ভোজপুরে মন্দির ও প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল। আমরা শুধু ভোজেশ্বর শিবমন্দিরটিই দেখলাম। এও এক নির্জন প্রান্তর। চারদিকে ছড়ানো ছিটানো বড় বড় পাথরের পাশ দিয়ে পৌঁছে গেলাম মাটি থেকে কয়েক মানুষ সমান উঁচু শিবমন্দিরে। পাথরের বড় বড় সিঁড়ি। উপরে একটাই পাথর কেটে বানানো শিবলিঙ্গ, এটি ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিবলিঙ্গ। খুব সম্ভবত, মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। চারপাশের বিশাল প্রান্তরে ভাঙা পাথরের নানান টুকরো। সকাল ৮টার ঠান্ডা ধু ধু প্রকৃতিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। ভীমবেটকা পৌঁছতে পৌঁছতে আরো এক- দেড় ঘন্টা।

       রাস্তায় পড়বে পূরণের সামোসার দোকান। সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে। সকালে এইপথের যাত্রীরা অনেকেই এখানে সামোসা গুলাব জামুন খেয়ে থাকেন। সুন্দর স্বাদ। একটু দূরেই বড় শহর ওবাইদুল্লাগঞ্জ। কিছু পরেই সীমানা শুরু হচ্ছে রাতাপানি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের। তারই মধ্যে ভীমবেটকা সহ পাঁচটি পর্বত নিয়ে প্রাগৈতিহাসিক মানবসভ্যতার আবাসভূমি। পুরাতত্ত্ববিদ ভি.এস.ওয়াকঙ্কার ১৯৫৭ এ প্রথম এই অঞ্চলের গুহায় আদিম মানবের বসবাসের চিহ্নের কথা জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। ৭০ এর দশক থেকে নিরলস গবেষণা চলে। প্রায় ৭৫০ টি প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট গুহা জুড়ে প্যালিওলিথিক, মেসোলিথিক, চালকোলিথিক যুগের মানুষের বসবাস ছিল। এমন গুহাও রয়েছে যেখানে ১ লক্ষ বছর আগের মানুষও থাকত।

       স্পেনের আলতামিরা গুহাচিত্রের সঙ্গে তুলনীয় ভীমবেটকার গুহাচিত্র। প্রায় ৩০০০০ বছর আগের থেকে এখানে গুহাচিত্র এঁকেছেন আমাদের পূর্বসূরীরা। সভ্যতা সংস্কৃতির ধারনাই যখন তৈরী হয়নি, তখন কিভাবে এত নিখুঁত ছবি আঁকা হতো, সেটাই আজকের সভ্যতার কাছে একটা বিস্ময়! প্রথম যুগের শিকারজীবী মানুষের ছবি যেমন আছে, তেমনি আছে পরবর্তীকালের যুদ্ধরত মানুষের চিত্র। চিত্রের বিষয় বৈচিত্র এবং আঁকার মাধ্যমের পরিবর্তন থেকে বিশেষজ্ঞরা ভীমবেটকায় মানবসভ্যতার বিবর্তনের ধারাটি খুঁজে পেয়েছেন। যুগ থেকে যুগান্তরে ভারতীয় উপমহাদেশে মানবসভ্যতার প্রথম আলো হিসাবে ভীমবেটকা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে ২০০৩ সালে।

       দর্শকদের মাত্র ১৫ টি গুহা দেখার অনুমতি আছে। বেলেপাথরের বিশাল গুহাগুলির সামনে গা ছমছম করে ওঠে। হাঁ করে থাকা গুহার মুখ থেকে এই বুঝি কেউ বেরিয়ে এল, বা আড়াল থেকে অনেকে বুঝি দেখছে আমাদের, দুর্বোধ্য কোনো ইশারায় ফুঁড়ে দেবে সূচাগ্র পাথরের অস্ত্রে।

        অশ্বারোহী, গজারোহী সৈন্যের ছবি যেমন আছে, তেমনি আছে নৃত্যরত মানুষের ছবি। হাতী, ঘোড়া, হরিণ এর ছবি। পুরাণ বর্ণিত বরাহ অবতারের মতো একটি রক্তবর্ণ অবয়ব আঁকা আছে 'মাশরুম কেভ' এ। আরেকটি আছে 'zoo cave',সেখানে গণ্ডার, সাপ, হরিণ, হাতী,ঘোড়া আরো নানা প্রাণীর ছবি। একটি গুহাতে পাওয়া গেছে একটি শিশুর হাতের চেটোর ছাপ, যা বর্তমান পূর্ণবয়স্ক মানুষের হাতের ছাপের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি!

       এই গুহাগুলিও প্রকৃতির একেকটি বিস্ময়। কোন কাল থেকে এইরকম গুহাগুলো দাঁড়িয়ে আছে। কোন আবহবিকারের ফলে পাথর ক্ষয়ে গিয়ে আদিমতম মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। বন্য পশু, ঝড় জল থেকে আগলে রাখত তাদের। সেই মানবেতিহাসের ধাত্রীগৃহে কোনোদিন সত্যি আসতে পারব, ভাবিনি। আসতামও না, এলেও হয়তো সেই আগ্রহ থাকতো না, যদি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কাকাবাবুর উপন্যাসে তাঁকে ভীমবেটকার গুহায় রাত্রিবাস করাতেন। যাঁরা লেখাটি পড়ছেন, তাঁরা পারলে ভূপাল রহস্য পড়বেন। বুঝবেন।

       চোখের সামনেই বা কতটুকু দেখলাম। নির্ধারিত ১৫ টি গুহার পরেও ভীমবেটকায় প্রায় ২৩০ টি গুহা আছে, যার ১৩৩ টিতে গুহাচিত্র রয়েছে। সেগুলি সাধারণের জন্য নয়। ভীমবেটকা থেকে চলে আসার সময় পিছন থেকে চেয়ে দেখছিল প্রাচীন প্রস্তর যুগের একটা সভ্যতা, তার কয়েক হাজার পরের প্রজন্মকে। কি জানি, কি ধারণা করল আমাদের সম্পর্কে।


ভোপাল থেকে  বাস, গাড়ি বা অটো ভাড়া করে ভোজপুর ও ভীমবেটকা দেখে একদিনেই ফিরে আসা যায়।

 ১০০০-১৫০০ ভাড়া পড়তে পারে। ভীমবেটকায় গাড়ির প্রবেশমূল্য ৩০০। ট্যুরিস্ট বাস হলে ৬০০। এছাড়া জনপ্রতি ২৫ টাকা। গাইড নিলে আলাদা ফি।

ভোপাল থেকে ভীমবেটকা দেখে পাঁচমারী চলে যাওয়া যায়। ভীমবেটকা থেকে পাঁচমারী ৪ ঘন্টার কম লাগবে।

মধ্যপ্রদেশের প্রবল গরমে ভীমবেটকা আসার চাইতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ঘোরার ভালো সময়।

এটা শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক ইতিহাসের জন্যও অসীম গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। পরিচ্ছন্নতা এবং শান্তি বজায় রাখা আবশ্যক।

যাঁরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে "এখানে কি দেখার আছে" জিজ্ঞেস করেন, তাঁদের জন্য ভীমবেটকা নয়। এর রোমাঞ্চ, গুরুত্ব আলাদা।  পুরো মধ্যপ্রদেশটাই অন্যরকম। না সাগর, না পাহাড়, না বরফ। অন্য কিছু। অন্যরকম।


Kinnaur Calls... A Trip to Kinnaur

       A trip to Kinnaur, Himachal Pradesh, India Kinnaur at its best...View at Sangla                   A click on this video ...

Popular posts